শিল্পিত পারু ।।
আরবী মহররম মাসের ১০ তারিখ। পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম
হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় ইরাকের কারবালায় প্রান্তরে। এইদিন নির্মমভাবে হত্যা করা মোহাম্মাদ
(সা.) এর প্রাণ প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন ও তার ৭২ জন সঙ্গীকে।
ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বোরিত এবং জঘন্যতম
ঘটনা ধরা হয় এই কারবালার যুদ্ধকে ! আজ
প্রায় সাড়ে তেরশ বছর পরও সেই শোক বুকে ধারণ করে আছে মুসলমানেরা। শিয়া
মুসলমানেরা নিজেদের রক্ত দিয়ে সেই শোকের মাতম করে যাচ্ছে এখনও । কিন্তু কেন এই যুদ্ধ ? কারা কিভাবে এই
নৃশংস যুদ্ধ শুরু করলো ?
সাল ১০ অক্টোবর, ৬৮০ খ্রী.। ৬১ হিজরি। কারবালার ময়দানে ইমাম
হোসাইন ও তার ৭২ জন সঙ্গীর সাথে ইয়াজিদের বাহিনীর ৩০ হাজার সৈন্যে সাথে হয় এই যুদ্ধ। কারন মদ্যপ ইয়াজিদকে খলিফা মানতে নারাজ হোসাইন। ইয়াজিদের
বিশাল বাহিনীর কাছে নত স্বীকার করতে অপরাগ ইসলামের সাহসী এই যোদ্ধা । নিশ্চিত
মৃত্যু জেনেও সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে সেদিন পরিবারের সকলের সাথে নিজের জীবন উৎস্বর্গ
করেছিলেন হোসাইন। তিন পর্বের ধারাবাহিকের আজ দ্বিতীয় পর্ব ।
(দ্বিতীয় পর্ব )
কারবালার দিকে যাত্রা : হোসাইন ও তার অনুসারীদের
ইয়াজিদের বশ্যতা স্বীকার করার জন্য মদিনার গর্ভনর
ওয়ালিদকে দিয়ে চাপ প্রযোগ করতে থাকে হোসাইন ও সাহাবীদের। এরপর আর মদিনায় থাকা আর নিরাপদ নয় মনে
করে হোসাইন ও তার অনুসারিরা মক্কায় চলে যায় ।
এসময় কুফা থেকে একের পর এক চিঠি আসতে থাকে
হোসাইনের কাছে। সবাই
হোসাইনের কাছে বাইয়াত নিতে চায় এবং ইয়াজিদের বিপক্ষে জান মাল বাজি রেখে যুদ্ধ করতে
চায় । এসময় প্রায় ৫০০ চিঠি আসে হোসাইনের কাছে। সবার আকুতি হোসেইন যেন দ্রুত কুফায়
চলে আসে।
পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকীলকে কুফার পাঠায় হোসাইন। মুসলিমকে পেয়ে একে একে ১৮০০ কৃফাবাসী হোসাইনের
পক্ষে বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করেন। পরিস্থিতি ভালো উল্লেখ করে হোসাইনেকে দ্রুত কুফায় আসতে বলেন মুসলিম।
এই চিঠি পেয়ে মক্কা থেকে কুফার দিকে যেতে চাইলে
কিছু সাহাবী হোসেইনকে কুফা বাসির উপর ভরসা করতে নিষেধ করেন । তার তার বাবা
আলীর সাথে কুফা বাসীর ধোকা দেয়ার কথা মনে করিয়ে দেয় । কিন্তু তবু ইসলামকে ইয়াজিদের হাত থেকে
রক্ষা করতে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন হোসাইন ও তার অনুসারীরা। সালটা ৬৮০ খ্রী. ৯ ই সেপ্টেম্বর ।
এর মধ্যে কুফার পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ইয়াজিদ নুমানকে
বরখাস্ত করে উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে কুফার নতুন গর্ভনর নিয়োগ করে। বর্বব উবাইদুল্লাহ দ্রুত তার বাহিনী
দিয়ে মুসলমানদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পরিস্থিতি তার অনুকুলে নিয়ে আসে । উবাইদুল্লা মুসলিমকে বন্দি করে হত্যা
করে । কুফা বাসী আবারো বিশ্বাসঘাতকতা করে হোসাইনের পক্ষ ত্যাগ করে পালিয়ে যায় । এই
বিশ্বাসঘাতকতার খবর মুত্যুদন্ড কার্যকরের আগে
মুসলিম চিঠিতে হোসেনকে জানায় ।
সেই চিঠি হোসাইনের কাছে যখন পৌছায় তখন কুফা মাত্র
২ দিনের পথ বাকি। সেখান থেকে হোসাইন ফিরতে
চাইলে তার পথ রোধ করে ইয়াজিদের তিন বাহিনী । আমর , সীমার ও হুসাইন বিন তামীম এর
বাহিনী হোসেইন ও তার অনুসারীদের এক মুরু প্রান্তের দিকে নিয়ে যায়। হোসাইন যখন জানতে পারে এই স্থানটির
নাম কারবালা তখন তিনি তার অনুসারী ও পরিবার নিয়ে তাবু ফেলে এই কারবালায়। সালটা ২ অক্টোবর, ৬৮০ কারাবলায়।
সেনাপ্রধান উমার ইবনে সাদের কারবালায় এসে তাদের
ফোরাত নদী থেকে পানি সংগ্রহ করা বন্ধ করে দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে পানির অভাবে শিশু নারী আর সৈনারা দিশেহারা
হয়ে পড়ে । ৮ দিন পানি পান করতে দেয়া হয়নি তাদের কাউকে ।
যুদ্ধ যখন অসম্ভভাবি তখন রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধে
৩ টি প্রস্তাব দেন হোসাইন । ১. তাকে মদীনায় ফিরে যেতে
দেওয়া হোক ২. তুর্কী সীমান্তের দূর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক । ৩. ইয়াজিদের সাথে
আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক ।
কিন্তু উবাইদুল্লাহ হোসেইনকে নির্শতভাবে ইয়াজিদের
বশ্যতা স্বীকার করতে বলে। হোসেইন ইয়াজিদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করার চাইতে
যুদ্ধে শহীদ হওয়াকেই সম্মানের মনে করেন।
তাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো দুপক্ষই। পরের
দিন ১০ ই মহররম শুরু হলো যুদ্ধ ।
শিল্পিত পারু
লেখক ও কবি
0 Comments