টিম প্রতিবেদন :
হঠাৎ সকাল বেলা উঠে দেখছেন আপনার
ফেসবুক বন্ধুরা সব বুড়ো হয়ে গেছে। পাকা দাঁড়ি, কোচকানো ভুরু, মাথার চুল
কমে যাওয়া বৃদ্ধ মানুষটি দেখতে অবিকল আপনার তরুন বন্ধুটির মতো। প্রথমে হয়ত অবাক
হয়েছেন কিন্তু যখন নিশ্চিত হলেন যে এটা একটি ফটো অ্যাপের কারসাজি তখন আপনিও হয়ত
ঝাঁপিয়ে পড়ছেন এই বৃদ্ধ হবার চ্যালেঞ্জে। বৃদ্ধ বানানো এই অ্যাপটির নাম ‘ফেসঅ্যাপ’।
কিন্তু এই ফেসঅ্যাপের চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে আপনি কতটা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছেন নাকি
এই বৃদ্ধ হওয়া স্রেফ একটি মজার বিনোদন । চলুন একটু খোঁজ খবর করে আসি ।
কারা ব্যবহার করছে এই অ্যাপ :
শুধু সাধারণ ব্যবহারকারিরা নয় এই
অ্যাপ ব্যবহার করে মাশরাফি, সাবিক, মুশফিকরাও বুড়ো হয়ে গেছেন । জয়া, পূর্নিমারও মতো
দেশের বিউটি কুইনরা ৬০ বছর পর দেখতে কেমন হবে তা এখনই দেখা যাচ্ছে । ইন্ডিয়ান ক্রিকেট
টিমের তো সবাইকে নিয়ে কোলাজই বানানো হয়েছে । কোহলি- ধোনি-রোহিতরা
সবাই এখন বৃদ্ধ ।
ফুটবলের তারকারাও কম যায় না। মেসি, রোনালদোসহ
সবাই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এই কয়েকদিনে। তবে এসব ছবি বেশিরভাগই বানিয়েছে তাদের ভক্তরা।
ভক্তদের বানানো এসব ছবি এখন নেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বিনোদন । অন্যদিকে বলিউড
তারকারা তো কয়েকধাপ এগিয়ে । নিজেরাই তাদের বৃদ্ধ হবার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ
করছেন। বরুণ ধাওয়ান, অর্জণ কাপুর নিজের ওয়ালে সাজিয়ে রেখেছেন ৮০ বছর বয়সে তারা
দেখতে কেমন হবেন। আর তিন খানের ভক্তরা তো তাদেরকে সুদর্শন বৃদ্ধ
বানিয়ে দিয়েছে ।
কেন এত জনপ্রিয় হলো এই বৃদ্ধ হবার ছবি
? :
টেকনোলোজির উন্নতির কারনে এবারে এই
ছবি এত বেশি রিয়েলেস্টিক বা বাস্তবসম্মত হচ্ছে যে, সবাই মুগ্ধ
হচ্ছেন নিজেকে দেখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে
এই বৃদ্ধ হবার ছবি। কার চেহারা বেশি মানানসই হয়েছে, তা দেখাতেই
অনেকেই এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন। অ্যাপটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আটর্টিফিসিয়াল
ইন্টেলিজেন্স যার নাম নিউরাল নেটওয়ার্ক । এতে পরিবর্তিত ছবিটি বাস্তবের অনেক
কাছাকাছি হচ্ছে। এত নিখুঁত পরিবর্তিত ছবি এর আগে কখনো দেখেনি সোশ্যাল মিডিয়ার
মানুষ । তাই এবার সোরগোল পাকিয়ে দিয়েছে অ্যাপটি ।
কিন্তু কারা বানালো এই অ্যাপ :
ফেসঅ্যাপটি বানিয়েছে
রাশিয়ান একটি কোম্পানী যার নাম ‘ওয়ারলেস
ল্যাব’। সেন্ট
পিটার্সবার্গের ছোট একটি তরুন দল এটি বানিয়েছে যার প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন
ইয়ারোসলাভ গনচারোভ ।
এন্ড্রোয়েড ও আইওএস দু ধরনের মোবাইল
ফোনে অ্যাপটি চলছে । চেহারা পরিবর্তনের জন্য কয়েক ধরনের অপশন আছে এটিতে। হাসিমুখ, তরুন কিংবা
বৃদ্ধ দেখানোর জন্য এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে। এমনকি লিঙ্গ পরিবর্তন করলে আপনি দেখতে
কেমন হবেন সেটাও এই অ্যাপস দিয়ে বানানো যায় ।
এর আগে ২০১৭ সালে ফেসঅ্যাপটি চালু
হয়েছিল । তখনও বেশ সাড়া ফেলেছিল অ্যাপটি। এবার বৃদ্ধ হবার নতুন অপশন যোগ
হওয়ায় আবারো ভাইরাল হয় এটি । গত সপ্তাহ পর্যন্ত গুগল প্লে স্টোর হতে ৫
কোটিবার ডাউনলোড হয়েছে অ্যাপটি । বিশেষ কিছু অপশন কিনতে ১৫০ টাকা থেকে ৩৪০০ টাকা
পর্যন্ত খরচ হচ্ছে তবে বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করছেন ফ্রিতে ।
এর আগে কয়েক বার বর্ণবাদী আচরনের জন্য
সমালোচিত হয়েছিল এই অ্যাপটি । ‘হট’ দেখাতে গিয়ে
তারা কালো মানুষদের
ই্উরোপিয়ানদের মতো সাদা বানিয়ে
ফেলেছিল ব্যবহারকারিদের । এর জন্য অবশ্য পরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় অ্যাপটির প্রধান
।
কতটা নিরাপদ এই ফেসঅ্যাপ :
কতটা নিরাপদ তা জানতে হলে আগে জানতে
হবে কিভাবে এবং কেন কাজ করে এই অ্যাপ ।প্রতিটি অ্যাপ বানানোর পিছনে তাদের নিদৃষ্ট
কিছু কারন থাকে । অ্যাপ জনপ্রিয় করে আয় করা যেমন একটি কারন, তেমনি
আরেকটি বিশেষ কারন হচ্ছে ব্যবহাকারীর কিছু তথ্য সংগ্রহ করা । সেই তথ্যও পরবর্তীতে
চাইলে তারা তৃতীয় কোন পক্ষের কাছে বিক্রি অথবা পাচার করে দিতে পারে ।
ফেসঅ্যাপটি তাদের প্রাইভেসি পলিসিতে
জানিয়েছে, তারা ব্যবহারকারীর আইপি অ্যাড্রেস, ব্রাউজারের
কুকিস, লগ
ফাইল, ডিভাইসের
বিভিন্ন তথ্য এবং অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
ফেসঅ্যাপটি কিভাবে এই তথ্য সংগ্রহ
করছে :
আপনি যখন ফেসবুক এর মাধ্যম দিয়ে ফেসঅ্যাপ
এ ঢুকছেন তখন আপনার মেইল নাম্বার,
ফেসবুকের ছবি এমনকি বন্ধুদের সাথে
শেয়ার করা ছবিও তাদের দখলে নেবার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন।
আর যদি প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড
করে চালু করেন তাহলে আপনার মোবাইলের ক্যামেরা, স্টোরেজের সকল ছবি এবং তথ্য নেবার
অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন । এমনকি যা আপনি ডিলিট করেছেন বা পরিবর্তন করেছেন এমন
তথ্যগুলোও নেবার অনুমতি তারা নিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া ইন্টারনেটের ডাটা গ্রহণ, নেটওয়ার্ক
কানেকশন দেখা এমনকি আপনার ফোন স্লিপিং মুডে যাওয়া ঠেকানোর অনুমতি তাদের দিয়ে দিতে
হচ্ছে ।
তারমানে মজা করার জন্য অ্যাপটি
ডাউনলোড করলেও এটি তৃতীয় পক্ষের হাতে আপনার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য তুলে দেবার অনুমতি
দিয়ে দিচ্ছেন ।
এসব ডাটা চুরি হলে আপনার কি কোন ক্ষতি
হবে ? :
এটা রাশিয়ায় নিবন্ধিত একটি কোম্পানী।
কোম্পানীর আইন অনুযায়ি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাকে তাদের সকল তথ্য দিতে বাধ্য
ফেসঅ্যাপ। আপনি যদি মনে করেন রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ার মতো আপনার
মোবাইলে কোন তথ্য নাই অথবা মোবাইলে রাখা ছবি এবং তথ্য ফেসঅ্যাপ অন্য কাউকে দিয়ে
দিলে আপনার কোন সমস্যা নাই তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করুন এই অ্যাপটি ।
কিন্তু আপনি যদি মনে করেন আপনার
মোবাইলের গোপন ছবি ও তথ্য কোন একদিন প্রকাশ হয়ে গেলে আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন
তাহলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এই অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন ।
হারাম নাকি হালাল ?
এত গেল টেকনোলজিক্যাল নিরাপত্তার কথা
। এবার আসা যাক ধর্মীয় ব্যাখায় । আরব দেশগুলোতে এই অ্যাপের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে
।খেলোয়াড় থেকে রাজপরিবারের সদস্য কেউ বাদ নাই এটি ব্যবহার করতে । এখন সেই সুনামীতে
ঘি/পানি ঢেলেছেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ । তিনি ফতোয়া দিয়েছেন ফেসঅ্যাপ ব্যবহার করে
বৃদ্ধ হওয়া একবারে হারাম । মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার ড.ইহসাম আল
রাউবি বলছেন ‘এটা ব্যবহার
ইসলাম বিরোধী। এটা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয় তাই এটার ব্যবহার হারাম’ । এবার
সামলাও ।
সিদ্ধান্ত আপনার হাতে। আপনি কি ক্ষতির
সম্ভাবনা মাথায় রেখে বৃদ্ধ হবার উৎসবে মেতে উঠবেন নাকি নিরাপত্তাহীনতা বা হারাম
কাজ থেকে বিরত রাখতে
ফেসঅ্যাপ থেকে নিজেকে দুরে রাখবেন সেই
সিদ্ধান্ত নেবার সময় কিন্তু এখনি ।