শিল্পিত পারু ।।
আর্যদের বলা হয় পৃথিবীর
সবচেয়ে প্রাচীন সভ্য জাতি। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘আরিয়ান’। এই
জাতির আবাসস্থল মধ্য এশিয়া বা পারস্য যা বর্তমানে যা ইরান। ইউরাল পর্বতের পাদদেশে ছিল তাদের বসবাস । অনেকে মনে করেন ভারতীয়দের পূর্বপুরুষ ছিলেন এই আর্যরাই
। হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি এই আর্যদের হাতে। রামায়ন ও মহাভারত লেখা
হয় এই আর্যদের যুগে । যা ‘বৈদিক যুগ’ নামে
পরিচিত। অনেকের মতে আর্যরা ছিল শ্রেষ্ঠ মানুষ। কিন্তু কিভাবে কখন এবং কেন আর্যরা ভারতে এল ? তাদের আসার
আগে এইসব এলাকায় কারা বাস করতো ?
কোথা হতে এলো আর্যরা ?
১৫০০ খ্রি.পু আর্যরা মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে
প্রবেশ। পশ্চিমাদের মতে আর্যদের আদি বাসস্থান ইউরোপ। কোন বিশেষ কারণে আর্যরা ইউরোপ থেকে এশিয়ায় আসে। এরপর ভারতে ছড়িয়ে পড়ে । এমন সন্দেহের কারণ হচ্ছেইউরোপীয় ভাষার অনেক শব্দ এসেছে আর্য ভাষা থেকে। তাছাড়া আর্যরা ছিল লম্বা গড়নের, ফর্সা বরণের এবং খাড়া নাক বিশিষ্ট । ইউরোপীয়দের দৈহিক গঠনও ঐ রকম।
অন্য আরেক পন্ডিতদের মত, আফ্রিকা থেকে প্রথমে ঘুরতে ঘুরতে মধ্য এশিয়ায় আসে আর্যরা। সেখান থেকে এক
গ্রুপ চলে যায় ইউরোপের দিকে আরেক গ্রুপ চলে আসে আমাদের ভারতের দিকে ।
আর্যরা কেন আসলো ভারতে ?
আর্যগণ প্রথমে পশুপালন
করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা দলবদ্ধ হয়ে অনেকগুলো পশু সাথে নিয়ে ঘাস আচ্ছাদিত
অঞ্চল বা প্রদেশে গমন করতেন। পরে সে স্থানের ঘাস পশু খাদ্য হিসেবে নিঃশেষিত হলে
তারা পুনরায় অন্য অঞ্চল বা প্রদেশে যেতেন। এভাবে তারা প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে
অন্য স্থানে গমন করতেন বলে আর্য (অর্থাৎ গমনশীল) নামে পরিচিত হয়েছেন। জীবিকার
তাড়োনায় তারা ভারতে চলে আসে ।
আর্যদের আসার আগে :
পূর্বে এ ভারতের নাম ছিল ব্রহ্মাবর্ত। আর্যরা আসার পর নাম হল আর্যাবর্ত। আর্যরা আসার আগে এই
ভারত মহাদেশে চারটি জাতি বাস করতো । নেগ্রিটো, অস্ট্রিক,
দ্রাবিড় ও ভোটচীনীয় । অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ
গড়ে উঠেছে বলে মনে করা হয়। প্রায়
পাঁচ-ছয় হাজার বছর পূর্বে অস্ট্রিক জাতি ইন্দোচীন থেকে বাংলায় প্রবেশ করে এবং
নেগ্রিটোদের পরাজিত করে। সমসাময়িক সময়ে বা কিছুদিন পরে দ্রাবিড় জাতি খাইবার গিরিপথ
দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে এবং তারা অস্ট্রিক জাতির উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠী।
আর্য থেকে হিন্দু :
আর্যরা এদেশে আসার পর, আর্য আনার্য সব সংস্কৃতি মিলেমিশে যা দাঁড়ায় তাই আজকের ' হিন্দু সংস্কৃতি'। 'হিন্দু' শব্দটি এসেছে সিন্দু শব্দ থেকে । খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে পারস্য রাজা সাইরাস ও দরায়ুস সিন্ধু আক্রমন করেছে , সেসময় পারসিকরা সিন্ধু উচ্চারণ করতে না পেরে বলত হিন্দু । এই হিন্দু নামটি কালক্রমে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সিন্ধু তীরের আদিবাসিরা নিজেদের হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করে ।
আর্যরা এদেশে আসার পর স্থানীয় অনার্যদের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়েছিল। রামায়ন মহাভারতে যেসব যুদ্ধর কথা পাওয়া তা আর্য ও অনার্যদের যুদ্ধেরই সাহিত্যিক রুপ বলে অনেকে মনে করেন ।
আর্যদের মুল ধর্মগ্রন্হ ‘বেদ’। এর রচনাকাল নিয়ে মতভেদ
আছে জার্মান পন্ডিত ম্যাক্সমুলারের মতে এটি ১২০০ খ্রি.পুর্বাব্দে কিন্তু পন্ডিত ডিন্টারনিৎসের মতে ২৫০০-২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এটি রচিত হয় । তবে ভারতীয় পন্ডিত বালগঙ্গাঁধর তিলকের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ সালে বেদের আর্বিভাব হয় । তাহলে প্রশ্ন আর্যরা আসার আগে নাকি পরে বেদ রচিত হয়েছে । বেদের রচনাকাল নিয়ে সমাধান হয়নি এখনও। এ নিয়ে বির্তক চলমান।
আর্যরা কি বহিরাগত ।
আর্য শব্দের অনেক অর্থ। যা গমনশীল, যারা সুশৃংখল, যারা ঈশ্বরের পুত্র অথবা যারা কৃষিকর্মকারি । এজন্য কারা আসলে আর্য তা নিয়ে মতভেদ আছে পন্ডিতদের মধ্যে ।
আবার পশ্চিমা পন্ডিতরা
মনে করেন আর্যরা বাহির থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে। আর্যরা কি ভারতীয় নাকি বহিরাগত তা নিয়েও বির্তক দীর্ঘদিনের। কলিন রেনফ্রিউ এর মতে, ঋগ্বেদে কোথাও বলা হয়নি যে আর্যরা বহিরাগত সুতরাং
এটার সম্ভবনাই প্রবল যে আর্যরা বেদ রচনার বহু পূর্বেই ভারতে এসে বসতি স্থাপন
করেছিল। কিন্তু আর্যরা অভারতীয় এই তত্ত্বটা সর্বজনগ্রাহ্য নয়, কারন এর পিছনে বেশ কিছু যুক্তি আছে,যা অস্বীকার করার
মত নয়
।
অন্যদিকে হরপ্পা সভ্যতার মতো
সমৃদ্ধ সভ্যতা আর্যদের আসার আগেই তৈরী হয়েছিল এই এলাকায় । আর্যদের আগমনে হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংস শুরু হয়। অনেকে মনে করেন আর্যরা আক্রমনকারি তারা ভারত আক্রমন
করে ধ্বংস করেছিল হরপ্পার মতো সমৃদ্ধ সভ্যতা। তারা বহিরাগত এবং আক্রমনকারী ।
0 Comments