স্পোর্টস হাবিব ।
ঐতিহাসিক গোলাপী বলের ইডেন গার্ডেন টেস্টে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হেরেছে ইনিংস
ও ৪৬ রানে। ২২ নভেম্বরে শুরু হওয়া খেলা মাত্র ঘন্টা খানিকের জন্য তৃতীয় দিন
পর্যন্ত গড়িয়েছিল। টসে জিতে মমিনুলের ব্যাটের সিদ্ধান্ত কতটি সঠিক ছিল দিবা
রাত্রির এই প্রথম টেষ্ট ম্যাচে তা ফলাফল দেখলে বোঝা যায়। কিন্তু ফিল্ডিং নিলেই কি
ম্যাচের ফলাফলে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হতো? আমার মনে হয় না। একমাত্র প্রথম ইনিংসে ডাক
মারা মুসফিক দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা রুখে দাঁড়িয়েছিল ৭৪ রান করে। মাহমুদুল্লাহ (৩৯)
ভালো শুরু করেও আহত হয়ে পরে আর মাঠেই নামতে পারেনি। ফলাফল ইনিংস পরাজয় ।
প্রথম টেস্টে কিছু করতে না পারলেও এই টেস্ট সেঞ্চুরী হাকিয়ে ইতিহাসে নামটা
আরেকবার ঢুকিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, করেছেন ১৩৪ রান। অনেকদিন পর আবার দলে
এসে ইশান্ত শর্মা একাই যেন ধ্বসে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ৯ উইকেট নিয়ে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ ও ম্যান অফ
দ্যা সিরিজও হয়েছে এই পেস বোলার। ঐতিহাসিক টেস্টের এই স্কোরটা তাই ইতিহাস হয়েই
থাকলো। বাংলাদেশ ১০৬ /১৯৫/৯ , ভারত ৩৪৭/৯ডি।
বাংলাদেশ পুরো ভারত ট্যুরে নাস্তানাবুদ হয়েছে । তিনটে টি টুইনটি ও দুটো টেস্ট
ছিল এবারের ভারত ট্যুরে। প্রথম টি টুইনটি মুসফিকের জোরে জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
এর পরে দুটো হেরে সিরিজ হারলো। আর পরের দুই টেষ্টই তো ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়। দুটি
টেষ্ট ম্যাচই শেষ তৃতীয় দিনেই ।
এই ট্যুরে ভাঙ্গাচোরা এক দল নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। কারন এই টেস্ট শুরু আগে
বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ছিল টালমাটাল। দুই দুটি ঘটনা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গেছে বড়
ধরনের সংকটের মুখে। প্রথমটি ক্রিকেটারদের ১৩ দফা দাবিতে ধর্মঘট আর শেষটি এসময়
দেশের শ্রেষ্ট খেলোয়াড় সাবিক আল হাসানের একবছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া। টুর্যের
মাত্র কয়েকটা দিন আগে এই্ সব ঝড় সামলে বাংলাদেশকে যেতে হয়েছে এই ঐতিহাসিক ট্যুরে।
সাকিব নাই, তামিম নতুন করে বাবা হলেন তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ট্যুর থেকে।
বাংলাদেশ
ভারতের মতো টেস্টের এক নাম্বার দলের কাছে হারবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বাংলাদেশে
জিততে চাওয়ার যে মানসিকতা ওয়ানডে বা টিটুইনটিতে দেখতে পাওয়া যায় তা টেস্টে দেখতে না
পাওয়ায় হতাশ। ক্রিকেটের আসল ফরম্যাটে হলো টেস্ট, সেই টেস্টে খেলোয়াড়দের মানসিকতার
ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা গেছে এবার । গাঙ্গুলির মুল্যায়ন তাই সঠিক । তার মতে 'বাংলাদেশকে আরো আগ্রাসী আর দৃঢ়চেতা মনোভাব আনতে হবে যেমন কোহলী যখন ব্যাট করে মনে হয় প্রত্যেকটি বলেই জীবন মরণ' । আসলেই খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাষা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে । আমরা জিততে না পারি কিন্তু আমরা সহজে হারবো না এটাই টেস্ট ম্যাচের শারীরিক ও মানসিক ভাষা হওয়া উচিত ।
ফলাফল যাই হোক আয়োজনের কোন কার্পন্য করেনি ভারত। সম্প্রতি কলকাতার দাদা ভারতীয় ক্রিকেট
বোর্ডের সভাপতি হয়েছেন। আর এসেই ভারতীয় ক্রিকেটকে যেন আবার ধামাকা দেয়া শুরু
করেছেন তিনি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ইডেন গার্ডেনে গোলাপী বলের দিবা রাত্রির
ম্যাচের এই বিশাল আয়োজন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচের ভারতীয়
অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী আর তিনিই এখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। দুই দেশের সেই দুই টিমের সদস্যদের দাওয়াত করতে ভোলেননি কলকাতার যুবরাজ।
আর এই টেস্টের আলো আরো বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী ঘন্টা বাজিয়ে শুরু
করেন দুইদেশের প্রথম ফ্লাডলাইটের এই গোলাপী বলের টেস্ট ম্যাচ। হারলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের এক স্মরনীয় ম্যাচ হয়ে থাকবে এই টেস্ট ।
স্পোর্টস হাবিব
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভক্ত
0 Comments