সালমান শাহ : বাংলা সিনেমার এক ক্ষনজন্মা রাজপুত্র ।





টকিজ মানিক

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এক সুদর্শন রাজপুত্রের আর্বিভাব হয়েছিল নব্বই এর দশকে । এদেশের সিনেমার ইতিহাসে এমন উজ্জল নক্ষত্র এর আগে আর একটিও আসেনি । ফ্যাশন, অভিনয় আর সৌন্দর্য়ের এক অপূর্ব সমন্বয়ে তরুন তরুনীর এক হার্টথ্রব আইকনে পরিনত হয়েছিলেন তিনি । তার নাম সালমান শাহ মাত্র তিন বছরেই বাংলার মানুষের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, সবচেয়ে প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিল বাংলা সিনেমার এই নায়ক। কিভাবে এতটা প্রিয় হয়ে উঠেছিল সালমান শাহ ?

সাল ১৯৯৩ । ভারতের সুপারহিট সিনেমা কেয়ামত সে কেয়ামত তাকএর রিমেক বানানো হয় বাংলাদেশে। সেই সিনেমায় আমির খানের চরিত্রে এক সুদর্শন যুবকের অভিষেক হয় । যার নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুর ইমন। সিনেমায় তার নাম পাল্টে রাখা হয় সালমান শাহ। সালমান মৌসুমী জুটির সেই কেয়ামত থেকে কেয়ামতসিনেমা মুক্তির পর বাংলাদেশের সিনেমা এক নতুন যুগে পর্দাপন করে আর সেটি হল সালমান যুগ

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ মাত্র তিন বছরে সিনেমার সকল হিসেব নিকেশ উল্টে দিয়েছিল এই অভিনেতা। তার ফ্যাশন, গেটআপ, অভিনয় দিয়ে একের পর এক হিট হচ্ছিল বাংলা সিনেমা। সালমান মানেই হিট সিনেমা। হল ভর্তি দর্শক । দেশীয় সিনেমার সুদিন শুরু হয়েছিল সেসময়। অল্প কয়েকদিনেই বাংলা সিনেমার একক অধিপতি হয়ে উঠেছিল এই তরুণ ।

উচ্চ মধ্যবিত্তদের যেখানে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে নাক সিটকানো স্বভাব ছিল, তারাও সালমানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল । গবীর থেকে বড়লোক, গ্রাম থেকে শহর সবার প্রিয় নায়কে পরিনত হয়েছিলেন তিনি। কারো কারো মতে এত অল্প সময়ে এতটা জনপ্রিয় এর আগে এদেশে কেউ হয়নি । সালমানও এসময় কিছুটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল তার এই জনপ্রিয় জীবন নিয়ে।

বাংলাদেশের তরুনদের ফ্যাশণ আইকনে পরিনত হয়েছিল সালমান । তার নিজের তৈরী এসব ফ্যাশন এবং স্টাইল এতটা আধুনিক ছিল যে অনেক বছর পর তার ফ্যাশন নতুন করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল বলিউডে
তিন বছরের ক্যারিয়ারে ২৭ টি সিনেমা করেছেন এই তরুণ । যার প্রথম বছরে মুক্তি পায় মাত্র একটি সিনেমা। 
পরের দুই বছর সেটা ধপ করে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ টি করে ।মানে গড়ে প্রতি দুই মাসে একটা করে সিনেমা মুক্তি। ১৯৯৬ সালে মুক্তিপায় ৯ টি সিনেমা যার মধ্যে ৪ টা তার মৃত্যুর পর। তার মৃত্যুর পর মুক্তি পায় মোট ৯ টি সিনেমা। যার প্রত্যেকটাই ছিল আশার অধিক ব্যবসা সফল। শুধুমাত্র প্রেমের বাজিনামের একটি অসমাপ্ত সিনেমা মুক্তি দেয়া হয়নি।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে অল্প কয়েকটা দৃশ্যে সালমান থাকলেই অন্য কাউকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে মুক্তি দেয়া হত সেই সিনেমা । মানুষ সেই অল্প অংশটুকু দেখতেই হুমড়ি খেয়ে পড়তো হলে । আর সালমানের মত দেখতে এসমন কাউকে পেলে তাকে নিয়ে শোরগোল পড়ে যেতে পত্র পত্রিকায়।

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ টি সিনেমার মধ্যে ৩ টি সালমান শাহ এর । তার জীবনদশায় মুক্তিপাওয়া শেষ সিনেমা স্বপের ঠিকানা বাংলাদেশে সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে আয় করে সিনেমার তালিকায় ২য়। ১৯ কোটি টাকা আয় করেছিল সিনেমাটি । অন্যদুটি সত্যের মৃত্যু নাইএবং কেয়ামত থেকে কেয়ামত

তার মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ সিনেমাবুকের ভিতর আগুন ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়।

১৯৯৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৪ বছর বয়সে রহস্যজনক ভাবে মুত্যু হয় বাংলা সিনেমার এই রাজপুত্রের । সালমানের মৃত্যুর পর গোটা বাংলাদেশের সিনেমা এক গভীর অন্ধকারে ঢুকে পড়ে । সেই অন্ধকার থেকে আজও বের হয়ে আসতে পারেনি আমাদের সিনেমা ।

টকিজ মানিক