'ডাক্তার ভাই' : মানব সেবায় নিয়োজিত বিরল এক মানুষ



মিল্টন সরকার ।।

নিজ ঘরের বারান্দায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মানুষের সেবায় সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া গরীবের ডাক্তার খ্যাত "ডাক্তার ভাই"। তাঁর পুরো নাম ডা. এড্রিক সাজিশন বেকার।জন্ম নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে।পেশায় একজন ডাক্তার।১৯৬৫ সালে এম.বি.বি. এস.ডিগ্রি শেষ করে মানবসেবার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে।

১৯৭১সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় বর্বরতার খবর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে,তা দেখে ব্যাথিত হন ডা. বেকার।ঠিক করেন বাংলাদেশে আসবেন।গরীব- দুখী, অসহায় মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন।

১৯৭৯সালে তিনি তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে আসেন,এদেশের সহজ-সরল মানুষ দেখে আর ফিরে যাননি জন্মভূমি নিউজিল্যান্ডে।প্রথম প্রায় দুই বছর মেহেরপুর মিশন হাসপাতালে ও টাংগাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে আট মাস কাজ করেন।১৯৮৩সালে চলে আসেন টাংগাইলের মধুপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।পায়ে হেঁটে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিতে থাকেন।অল্পদিনের মধ্যে এই ভিনদেশী চিরকুমারের বিনামূল্যে সেবার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে,আশে পাশের জেলা,উপজেলা থেকে রোগী আসতে শুরু করে।পরিচিতি লাভ করেন "ডাক্তার ভাই" হিসেবে।হিন্দু,মুসলিম,আদিবাসী সকলের কাছেই হয়ে উঠেন পরম শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিত্ব।

পরে ১৯৯৬সালে মধুপুর উপজেলা সদর হতে ২৩কি.মি. দূরে কাইলাকুড়ি নামক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে চার একর জায়গাজুড়ে প্রকৃতিক পরিবেশে গড়ে তুলেন "কাইলাকুড়ি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র"।

হাসপাতালের টাকা সংগ্রহের জন্য মাঝে মধ্যে নিজ দেশ ও অন্যান্য দেশে গেলেও বারবার ফিরে আসেন এখানে।এ অঞ্চলের মানুষের মায়া ও ভালবাসার জালে আটকে যান।৩২বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিয়ে গেছেন মধুপুর গড়ের হতদরিদ্র মানুষদের।নিজ দেশে বিলাসবহুল জীবনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পড়ে রয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর্তমানবতার সেবায়।ঘুমাতেন মাটির ঘরে,মেঝের উপর।ছিলনা কোন চাওয়া পাওয়া।অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন।মানুষের সেবায় পেতেন আনন্দ।গড় অঞ্চলের সহজ- সরল,সুবিধাবঞ্চিত,বনবাসী অসংখ্য মানুষের মুখে ফুটিয়েছেন হাসি।





২০১১ সালে হানিফ সংকেতের এক প্রতিবেদনে বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি'র মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন এই গরীবের ডাক্তার "ডাক্তার ভাই"।গ্রামবাসীর দাবির মুখে ২০১৪সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে।তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর পর নিজ হাতে গড়া হাসপাতালে তাঁর থাকার ঘরের বারান্দায় খ্রীষ্টীয় রীতিমতো সমাহিত করা হয়।

মানবসেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই মানুষটির মানব সেবায় আকৃষ্ট হয়ে আমেরিকা থেকে জেসন- মেরিন্ডা ডাক্তার দম্পতি ২০১৮ সালে মধুপুরে আসেন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।।
স্যালুট জানাই আপনাদের মতো আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত মানুষদের।।যুগ যুগ বেঁচে থাকুক 'ডাক্তার ভাই' এর কর্ম।।

ফেসবুক থেকে

Post a Comment

0 Comments