টকিজ মানিক ।।
কলকাতার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ব্যক্তিজীবন নিয়ে সাংবাদিকদের অতিরিক্ত উৎসাহে উষ্মা প্রকাশ করেছেন । তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি যা লিখেছেন তা তুলে ধরা হল ।
'আমার বিয়ে নিয়ে এবং কাকে বিয়ে করবো তাই নিয়ে একটি সবিস্তার আলোচনা ,সপ্তাহ খানেক ধরে পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন YouTube portal এ ছড়িয়ে পড়েছে।
যেহেতু আমার "সেলেব্রিটি" তকমা জুটেছে,তাই , হয়তো মানুষজনের আমার বিয়ে নিয়ে আগ্রহ আছে,থাকতেই পারে,কারণ সেলিব্রিটির কাজ ব্যতিরেকে তার ব্যক্তিগত জীবন ও তার ঘটনাবলীর চর্চা মিডিয়া দ্বারা (কখনো শিল্পীর স্ব-উদ্যোগেও) এতটাই সু-প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা,যে সেইটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে,এর উল্টোটা কোনো এক প্রাচীনকালে স্বাভাবিক থাকলেও,এখন এই উল্টো দাবি অস্বাভাবিক,এমনকি ন্যাকা,বা বোকা বোকা মনে হতে পারে।
তবুও,আমি এখনো মনে করি,যে সেলেব্রিটি পরিচয় সত্ত্বেও আমার গোপনীয়তার অধিকার আছে।যদিও সংবাদ মাধ্যমের ২৪×৭ এর চাপ,পাতা ভরানোর চাপ,তৎসহ ফেক নিউজ বা ম্যানুফ্যাকচার্ড নিউজের রমরমা,তবু আমার এই অধিকারের দাবি আছে। "আমি" এমন মনে করি,কারণ,আমি আজ পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক কে আমার ইন্টারভিউ নিতে অনুরোধ করিনি,আমার পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে,দুর্ঘটনায়,আনন্দে,হতাশায়,কান্নায়,হাসিতে আহ্বান করিনি,এমনকি ব্যক্তিগত ভাবে কোনো কাজের খবর ছড়িয়ে দিতেও সাহায্য চাইনি। থিয়েটার ও সিনেমার সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের যে স্বাভাবিক সম্পর্ক,সেই যোগাযোগই বজায় রেখে এসেছি সম্মান ও ভদ্রতার সঙ্গে ,তাই আমার গোপনীয়তার অধিকারে তাদের এই আঘাত,হস্তক্ষেপ আমার কাছে অত্যন্ত অপমানের।
আচ্ছা।
আচ্ছা।
এবার ধরে নেওয়া যাক,এ অপমান আমি গিলে নিলাম। সম্মান ও ভদ্রতার বিপরীতে অনুরূপ বাসনা জলাঞ্জলি দিয়ে মেনে নিলাম যে ,আমি যেহেতু কর্মসূত্রে এই আদর্শহীন সাংবাদিকতার হাঁড়ি কাঠে গলা দিয়েই আছি,তাই এই অশান্তি আমায় ভোগ করতেই হবে,এ প্রায় নিয়তি-নির্দিষ্ট।
কিন্তু যে মহিলার নাম ও ছবি কোনোরকম অনুমতি বা প্রি-ইনফরমেশন ছাড়া ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তিনি সেলেব্রিটি নন।তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব এবং সর্বোপরি সে নিজে কি পরিমাণ বিড়ম্বনা ও বিরক্তির শিকার হচ্ছেন,অনুমান করা কঠিন নয়। বলাই বাহুল্য মিডিয়া এর দায় স্বীকার করবেন না,সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে মিডিয়ার কাজ দায় দেওয়া,নেওয়া নয়।
গত এক বছর ধরে বিবাহযোগ্য বয়সের অপরাধে বিভিন্ন সাংবাদিকদের বিয়ে নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আমি একটি সময়ের কথা জানিয়েছি,কিন্তু কাকে বিয়ে করবো বা করতে চাই,তা নিয়ে প্রতিবার নিরুত্তর বা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক থেকেছি। আমি আশা করেছিলাম সংবাদ মাধ্যম এই গোপনীয়তা রক্ষার স্বাধীনতা আমায় দেবেন,সম্মান করবেন এই সিদ্ধান্ত,নিদেনপক্ষে অপেক্ষা করবেন উত্তরের। এইসব কিছুকে তারা চুলোয় পাঠিয়ে "তুই বলবি না,আমরা বের করে নেব রে" ভাব করে,বেশকিছু সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কে তাৎক্ষণিক অসুবিধের মধ্যে ফেলে কি বীরত্ব অর্জন করলেন,তা কল্পনা করা মুশকিল।
আমি তবু আশা করবো। আমি জানি ২৪×৭ এর চাপ থাকে,পাতা ভরানোর চাপ থাকে,ঠান্ডা ঘরের পলিসির চাপ থাকে,সার্কুলেশন,ভিউস,লাইকসের চাপ থাকে,আমি জানি একজন অভিনেতার শুধুমাত্র অভিনয়ের খবর বা আলোচনা দেখতে ও পড়তে পাঠকও বোর হয়ে যান,আপনারাও বোর হয়ে যান। আমি জানি দেশে রবীশ কুমার,প্রণয় রায় বা সিদ্ধার্থ বরদারাজনের মত সাংবাদিক হাতে গোনা,আমি জানি ভদ্রতা,সম্মান,এথিক্স এর মৃত্যু-পথগামিতা প্রায় সবক্ষেত্রে।আমি তবু আশা করব,যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে,অযাচিত ভাবে সংবাদ-মাধ্যমের সাহায্য বা সুবিধা নিইনি,তাই তারাও আমার বা আমার নামের সাথে জড়িয়ে আরো অন্য কিছু মানুষের জীবন অতিষ্ট করবেন না।
আমার জীবন,আমার আচার,আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আমার অধিকার,তা ভঙ্গ করার অধিকারও একান্তই আমার।সেলেব্রিটি হলেও,না হলেও। আপনাদের বিষয়,আমার কাজ।
এটুকুই অনুরোধ।
এটুকুই অনুরোধ।
অনির্বাণ'
২৯ জুন, ২০১৯
উল্লেখ অভিনেতা অনির্বাণ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন এবং কলকাতার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নতুন তারকা হিসেবে দেখা হচ্ছে । দর্শকদেরও ব্যক্তিজীবন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে । দেখা যাক সামনে কিভাবে ফ্যানদের ও কিছু অতি উৎসাহী সাংবাদিকদের এসব মাত্রাতিরিক্ত আবেগ কিভাবে সামলান উদীয়মান শক্তিশালী এই অভিনেতা ।
টকিজ মানিক
0 Comments