নতুন সপ্তাশ্চার্য : মানুষের গর্বের প্রতীক

 

তাজমহল :  মানুষের এক অনন্য সৃষ্টি


ইতিহাস  টিম :

প্রাচীনকাল  থেকে সপ্তম আশ্চার্যের তালিকা করে আসছে মানুষ। গ্রিকরা মনে করতো ৭ একটি লাকি সংখ্যাপ্রাচীন কালে যে তালিকা করা হয়েছিল তার ৬ টি স্থাপনা ইতিমধে ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি মাত্র নিদর্শণ 'পিরামিড' এখনও গর্বের সাথে ঠিকে আছে।

এরপর মধ্যযুগে এরকম আরেকটি সপ্তাশ্চার্যের তালিকা করা হয় বর্তমান যুগে এসে আবার নতুন করে  মানুষ নির্মিত শ্রেষ্ট সাতটি স্থাপনার তালিকা তৈরীর প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। সেভেনওয়ান্ডার ফাউন্ডেশন' নামের সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থা এর কাজ শুরু হরে ২০০০ সালে।

এরপর নতুন সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হয় ইন্টারনেট ও টেলিফোনে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে বর্তমান সময়ে টিকে থাকা পৃথিবীর শ্রেষ্ট সাতটি স্থাপনাকে

যদিও এই ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই তবু এর ফলাফল জানানো হয় ৭ জুলাই ২০০৭ সালে পর্তুগালের লিসবনে। জানানো হয় এখন থেকে এই সাতটি স্থাপনা হচ্ছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য এবং সর্বাধিক গর্বের  প্রতীকচলুন জেনে আসি নতুন সাত আশ্চর্য্যের নাম ও পরিচয় ।

৭. ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমার বা ত্রানকর্তা যীশু : ব্রাজিলের রি ডি জেনেরিও করকোভাডো পাহাড়ের উপর এই মুর্তিটি। যা লম্বায় ৯৮ ফুট, বেদিটি ২৬ ফুট উচু যীশুর হাত দুটি ৯২ ফুট লম্বা। ১৯৩১ সালে এটি নির্মিত মুর্তিটির ডিজাইন করেন হেইটর ডি সিলভা কস্টা আর নির্মাণ করেন ফরাসী ভাস্কর পল ল্যান্ডোস্কিব্রাজিলের গর্বের প্রতীক হয়ে দু হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে যীশু খ্রিষ্টের এই মুর্তিটি  

৬. তাজমহল : ভারতের  আগ্রায় সম্রাট শাহজাহান তার বউ এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সমাধীটি নির্মাণ করেন । এটির নকশা বা নির্মাণ কে করেছেন তা সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না, তবে অনেকে  মনে করেন উস্তাদ আহমেদ লাহুরী এই অসাধারণ সুন্দর স্থাপনাটির মুল নকশাকারি হতে পারেএর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৩২ খ্রি., আর শেষ হয় ১৬৫৩ খ্রি.বলা হয়ে থাকে বাইশ বছরে সময় লেগেছে কয়েক লাখ শ্রমিকের। পারস্য, ভারত এবং মুসলিম স্থাপত্যশৈলির মিশ্রণ ঘটানো হয় এই তাজমহলে। ১০০০ হাজারে বেশি হাতি ব্যহার করা হয়েছে এর নির্মাণ সামগ্রী আনায়নের জন্য । ২৮ ধরনের মহামুল্যবান পাথর বসানো আছে তাজমহলে। সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে মুল বেদি নির্মাণ করা হয়েছে । ভারতের রাজস্থান , ইরান , শ্রীলংকা, আরব, তীব্বত, আফগানিস্তান থেকে আনা হয়েছিল নীলকান্তমনি পাথর। সেমময় এটি বানাতে খরচ হয়েছিল ৩ কোটি ২০ লাখ রুপি। যা বর্তমান সময়ের প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার সমান ।

৫. মাচু পাচু : এটি পেরুর একটি প্রাচীন শহরপেরুর উরুবাম্বাবা উপতাক্যর একটি পাহাড়ের চুড়ায় এই পুরাতন শহরটি খুঁজে পায় আমেরিকান ইতিহাসবিদ হাইমার বিংহাম। সময়টা ১৯১১। বলা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা দক্ষিন আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার ভূভাগে অনেক জাতিগুস্টির উদ্ভব হয়েছিল তার মধ্যে কিছু জাতি ছিল অনেক প্রাচীন। সব জাতীগোস্ঠিকে একসাথে বলা হয় 'ইনকা সভ্যতা'। 'মাচু পিচু' হচ্ছে এই ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত শহর। ১৪৫০-১৪৭০ সালের দিকে এই শহরটি তৈরী হয়েছিল। স্পেনীয়দের দ্বারা আক্রমনের পর শহরটি ধ্বংস হয়ে যায় । এটি এখন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য্যের একটি ।

৪. চিচেন ইতজা : এটি বর্তমান মেক্সিকো ইউকাতান শহরে অবস্থিত একটি প্রাচীন শহর। আজকের মেক্সিকো ও এর আশেপাশে কয়েক হাজার বছর পূর্বে এ্কটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, যা মায়া সভ্যতার নামে পরিচিত। এই সভ্যতার স্বর্ণযুগের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী নগররাষ্ট ছিল এই 'চিচেন ইতজা'এটি তৈরি হয়েছিল ৬০০ খ্রি. দিকে এখানে কয়েকটি স্থাপনা আছে, এল কাস্টিল্লো, গ্রেট বল কোট, যোদ্ধাদের মন্দির। তারমধ্যে 'এল কাস্টিল্লো' সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানএটি পিরামিডের মতো একটি স্থাপনা যাতে প্রতি প্রান্তে ৯১ টি ধাপ রয়েছে। মোট ধাপ ৩৬৫ টি যা বছরের একেকটি দিনর প্রতীক। এটি ৩২১ ফিট  উচু। একদম উপরে একটি আয়তকার ভবন আছে এটি নির্মিত হয়েছিল মায়াদের দেবতা কুকুল্কানের উদ্দ্যেশে ।

৩. কলোসিয়াম : ইটালীর রোমের এই কলোসিয়াম ৭০- ৮০ সালে নির্মিত হয়। ৫০ হাজার মানুষ গ্লাডিয়েটরদের খেলা দেখতো এখানে বসে। এছাড়া নানা বিনোদনে কিংবা প্রকাশ্যে মৃতুদন্ড কার্য়করের জন্য এই কলোসিয়াম ব্যবহার করতো রোমান সম্রাটরা। দুই হাজার বছর পরও এখনএ আর্কিটেক্চারদের কাছে এটি বিষ্ময়কর স্থাপনা। ৫০০ বছর এটি ব্যবহৃত হয়েছে এরপর ভুমিকম্প এবং চোরদের উৎপাতে এখন ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছেছিল । বর্তমানে এটি ইটালীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থাপনা।

.পেত্রা : পেত্রা একটি পুরাতন আরব শহর। জর্ডানের হুর পাহাড়ের চূড়ায় এই গোলাপ রংয়ের শহরটিকে বলা হয় পাথর কেটে বানানো শহরখ্রি.পূ ৪০০ থেকে ২০০ খ্রী. সেসময়ের নাবাতাইন রাজ্যের এটি রাজধানী ছিল । পেত্রা পর্যটকদের কাছে দিন দিন অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।

১. চীনের প্রাচীর :  এটি মানুষের নির্মিত সবচেয়ে লম্বা  স্থাপনাএর দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটারশক্রদের হাত থেকে বিশেষ করে মোঙ্গলদের হাত থেকে বাঁচতে চীন এই প্রাচীর নির্মাণ করেনএটার শুরু হয় খ্রি.পু ৫০০  দিকে এবং শেষ হয় ১৬০০ খ্রি. দিকে। সাত আশ্চার্য্যের তালিকা এটি সবচেয়ে পুরাতন স্থাপনা

এছাড়া 'গিজার মহাপিরামিডকে' দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। সপ্তাশ্চর্যের যখন শুরু হয় সেই  গ্রিকদের আমলের প্রথম সপ্তাশ্চার্যের একটি মাত্র নিদর্শন এখন টিকে আছে পৃথিবীতে আর সেটি হল এই পিরামিড। পিরামিডের নির্মাণকাল ধরা হয় ২৫৬০  খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে । মানে আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে ।