সূর্যগ্রহণ কি সত্যিই অশুভ ? বিজ্ঞান কী বলছে !



বিজ্ঞান টিম ।।

সূর্যগ্রহণের কথা শুনলেই প্রথমে মনে পড়ে যায় ওই সময়টি আসলে নাকি অশুভ। আসলে নানা সংস্কার জড়িয়ে রয়েছে গ্রহণের সঙ্গে। কেউ বলেন ওই সময়টায় খাবার খাওয়া ঠিক নয়। কেউ বলেন, গ্রহণ শেষ হলে স্নান করা বিধেয়। ওই সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের সাবধানে থাকার পরামর্শও দিয়ে থাকেন অনেকে। এসব সংস্কার শুধু ভারতে নয়, অনেক দেশেই রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক, সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত কয়েকটি সংস্কারের কথা।

  • আজটেক সভ্যতায় মনে করা হত, গ্রহণ মানে সূর্য বা চাঁদকে একটু একটু করে খেয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর থেকেই মেক্সিকোর বাসিন্দারা মনে করতে শুরু করেন, যদি কোনও গর্ভবতী মহিলা গ্রহণ দেখেন, তখন তাঁর গর্ভের সন্তানের মুখও একটু একটু করে খেয়ে নেয় অশুভ শক্তি

আবার হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসে রাহু গ্রাস করে সূর্য বা চন্দ্রকে। তাই এই সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের ঘরের বাইরে বের হওয়াই বারণ। তাতে সন্তানের মুখ বিকৃত হতে পারে, খারাপ জন্ম চিহ্ন থেকে যেতে পারে বলে ধারণা।

তবে এর কোনও বাস্তব সম্মত বা বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা মেলে না। সূর্যগ্রহণ দেখতে গিয়ে সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকালে চোখ খারাপ এমনকী, অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। সে গর্ভবতী মহিলা শুধু নয়, যে কোনও কারও ক্ষেত্রেই এটি হতে পারে।

  • গ্রহণের সময় শাড়িতে পিন বা সাধারণ ভাবে সেফটিপিন, কোনও গয়না পরতে বারণ করা হয়। নিষেধ থাকে ছুরি বা বঁটি দিয়ে ফল-সবজি কাটাতেও। এতে নাকি বিপদ হতে পারে।

এরও কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

  • মেক্সিকানরা মনে করেন আবার উল্টোটা। তাঁদের সংস্কার, গ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলারা পেটের কাছে ছুরি ধরে বসে থাকতে পারেন বা লাল অন্তর্বাস পরতে পারেন। এতে নাকি গ্রহণের কু-প্রভাব পড়ে না। রক্ষা পায় গর্ভের সন্তান।

এরও কোনও বৈজ্ঞানিক সমর্থন মেলে না।

  • গ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকারও পরামর্শ দেন অনেকে।

কিন্তু গাইনোকলজিস্টরা জানাচ্ছেন গ্রহণের সঙ্গে সন্তান ধারনের কোনও লড়াই নেইষ তাই এই ধরনের পরামর্শে কান দেওয়ার কোনও দরকারই নেই।

  • গ্রহণের সময়ে রান্না করে রাখা খাবার না খাওয়ার কথাও বলা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সূর্যগ্রহণের সময় অনেক জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে আমাদের পরিবেশে। তার ফলে রান্না করে রাখা খাবার বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এই সময় না খাওয়ারও নিদান থাকে।

এগুলিরও জোরালো কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেলেনি। আর ফ্রিজের ভিতরে এমনিতেই তো সূর্যের আলো পৌঁছায় না।

  • ইতালিতে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, গ্রহণের সময়ে ফুলের গাছ পুঁতলে তাতে বেশি রঙিন ফুল ফোটে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না থাকলেও গাছ পোঁতার উৎসব মন্দ নয়।

  • আফ্রিকার দুটি ছোট দেশ টোগো ও বেনিনে বিশ্বাস, চাঁদের সঙ্গে সূর্যের লড়াইয়েই গ্রহণ হয়। পরে সূর্যকে ফিরিয়ে আনতে পৃথিবীর মানুষদেরই সাহায্য করতে হয়। তাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মিটিয়ে নিলেই সূর্য আবার স্বমহিয়ায় ফিরে আসে।

এটিরও কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও, কল্পনাটি মোটেও মন্দ নয়। চারিদিকের এত লড়াই যদি ওই বিশ্বাস বলে কিছুটাও বন্ধ হয় ক্ষতি কি!


বিজ্ঞান টিম
ফেসবুক থেকে

Post a Comment

0 Comments