শিল্পিত পারু ।।
আলেকজান্ডার হচ্ছেন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী যোদ্ধা। মাত্র ৩২ বছর বয়সে যিনি পৃথিবীর অর্ধেকটাই দখল করে ফেলেছিল। গ্রিস থেকে ভারতের পাঞ্জাব দখলে তিনি একটি যুদ্ধেও হারেনি। ইতিহাসের এই পরাক্রমশালী যোদ্ধার কথা মানুষ দুই হাজার বছর পরও মনে রেখেছে। সবাই তাকে চেনে আলেকজান্ডার, আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট নামে ।
কিন্তু কিভাবে এত অল্প বয়সের একজন তরুণ এত বিশাল সম্রাজ্য জয় করলো ? কত শক্তিশালী ছিল তার সেনাবাহিনী? অথবা ব্যক্তি আলেকজেন্ডার কি উভয়কামি ছিলেন ? কিভাবে মৃত্যু হলো আলেকজান্ডারের বিষে নাকি ম্যালেরিয়ায় ? আলেকজেন্ডার কি সত্যিই মহান যোদ্ধা ছিলেন নাকি ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ খুনি?
পুরো ধারাবাহিক জুড়ে আমার এরকম আরো নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজব। নজর দেবো আলেকজান্ডারের জন্ম, মৃত্যু, শিক্ষা, প্রেম এবং যুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর দিকে।
আজ অষ্টম কিস্তিতে নজর দেয়া যাক আলেকজান্ডারের আশেপাশের তার প্রিয় -অপ্রিয় মানুষগুলোর উপর
(আগের কিস্তির পর....)
পর্ব : ০৯
প্রিয়-অপ্রিয় : আলেকজান্ডারের কাছের
১১ জন মানুষ !
আলেকজান্ডারের আশেপাশে কারা ছিল । কারা তার পরামর্শদাতা? কারাতার সহযোদ্ধা ।
কেমন সম্পর্ক ছিল তাদের সাথে ? শুরু করা যাক তার পিতাকে দিয়ে ।
ফিলিপ ছিলেন আলেকজান্ডারের পিতা ও মেসডোনিয়ার
রাজা। যুদ্ধে এক চোখ হারানো পিতা
পারস্য অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু
দেহরক্ষীর হাতে নিহত হবার পর বাবার সেই
স্বপ্ন পুরনের দায়িত্ব তুলে নেয় আলেকজান্ডার ।
অলিম্পাস হচ্ছেন
আলেকজান্ডারের মা। উচ্চাকাঙ্খী এই মা সবসময় বলতেন আলেকজান্ডারের জন্ম হয়েছে
বিশ্ব জয়ের জন্য। তিনি দাবি
করতেন দেবতা জিউসের সন্তান
আলেকজেন্ডার। সারাজীবন
মায়ের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি আলেকজেন্ডার। বিশ্ব জয়ের জন্য বের হবার পর আর কখনো
দেখা হয়নি মা আর পুত্রের ।
ফারমিওনয় ছিলেন
মেসিডোনিয়ার সেনা প্রধান । যুদ্ধ জয়ে বাবার বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ এই
সেনাপতির অবদান ছিল অনেক। তিনি যাতে পুত্র হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারেন সেজন্য
আলেকজান্ডার তাকে হত্যা করেছিল। কারন
এর আগে তাকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুত্র ফিলোটাসকে হত্যা করেছিলেন আলেকজান্ডার
।
হেফোসটিওন হচ্ছেন
ছোটবেলার বন্ধু এবং পুরুষ প্রেমিক। যার মৃত্যু শোকে অসুস্থ হয়ে পরে আলেকজান্ডার মারা যান। আলেকজান্ডারের ছিল তিন বউ এবং দুই জন
পুরুষ প্রেমিক। হেফাসটিওন
ছিলেন তাদের একজন । সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু, প্রেমিক ও সহযোদ্ধা । অনেকে মনে করেন হোমারের ‘ওডেসিতে’ ‘আর্কিলিকসে’র প্রাণের বন্ধু ও সহযোদ্ধা যেমন ছিল ‘প্যাট্রোকেলাস’
তেমনি আলেকজান্ডারের ছিলেন ‘হেফাসটিওন’ ।
ছোট বেলার বন্ধু ও
সহযোদ্ধা টলেমি। একসাথে অ্যারিস্টটলের কাছে শিক্ষা নিয়েছেন। মৃত্যুর পর যিনি আলেকজান্ডারের লাশ
ছিনিয়ে এনে সামাধী করেছিল আলেকজান্দ্রিয়ায় । কোথায় দাফন করেছেন তা কেউ জানে না
শুধুমাত্র টলেমি ছাড়া। তাই আলেকজান্ডারের কবর আজ অমীমাংসিত রহস্য !!
ক্লাইটাস ছিলেন সহযোদ্ধা ও জেনারেল। খুবই শক্তিশালী ও সাহসী যোদ্ধা। ‘গ্রানিকাসে’র
যুদ্ধে আলেকজান্ডারকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। পারস্যের সৈন্যরা যখন তার বুকে ছুরি বসাতে যাবে এমনসময় সেই সৈন্যর হাত এ কোপে কেটে বাঁচিয়ে দিয়েছিল
আলেকজান্ডারকে। পরে
আলেকজান্ডারের স্বৈরাচারি বা একনায়ক হয়ে ওঠাকে মেনে নিতে পারেনি ক্লাইটাস। বলেছিলেন ‘আলেকজান্ডার
অত্যাচারি অহংকারি রাজা হয়ে উঠেছে’। এই কথা শুনে রাগে উত্তেজিত
মদ্যপ আলেকজান্ডার নিজের হাতে ক্লাইটাসকে খুন করেন । যদিও পরে এই খুনের জন্য অনেক অনুশোচনা করেছিলেন
আলেকজান্ডার।
ফিলোটাস বন্ধু ও সহযোদ্ধা এবং সেনা প্রধান ফারমিওনের
ছেলে। আলেকজান্ডারকে হত্যার
ষড়যন্ত্রের জন্য তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। পরে
তার পিতা ফারমিওনকেও হত্যা করা হয় যাতে সে ছেলের হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারে।
এন্টিপাত যার হাতে গ্রিক সম্রাজ দিয়ে বিশ্বজয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন আলেকজান্ডার। পারস্যজয়ের
মাঝামাঝি সময় একবার স্পার্টানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল মেসিডোনিয়া। খুব ভালোভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে
স্পার্টাদের পরাজিত করেছিল এন্টিপাত যা ফলে পারস্যে জয় অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে
আসতে হয়নি আলেজান্ডারকে। আলেজান্ডারের
মৃত্যুর পর তাকে হত্যা করা হয় ।
রোখসানা আলেকজান্ডার প্রথম
বউ এবং একমাত্র পুত্রের জননী। আলেকজান্ডার মারা যাবার তের বছর পর মা ও পুত্র
দুজনকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় ।
বাগোস ছিল পারস্যের হেরেমখানার একজন খোঁজা পুরুষ, যাকে আলেকজান্ডার ভালোবাসতেন । মৃত্যুর
দিন পর্যন্ত পরম বিশ্বস্ততা আর ভালোবাসা নিয়ে পাশে ছিলেন এই যুবক। বাগোস একমাত্র পুরুষ যার সাথে
আলেকজান্ডারের ভালোবাসার সম্পর্ক শরীর পর্যন্ত গড়িয়েছিল ।
অ্যারিস্টটল ছিলেন আলেকজান্ডারের প্রিয় শিক্ষক
ও দার্শনিক। যার কাছ
থেকে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন ঢুকেছিল আলেকজান্ডারের
মাথায়। তিন বছরের শিক্ষা
পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল আলেকজান্ডারকে ।
(চলবে...)
শিল্পিত পারু
কবি ও লেখক
(চলবে...)
শিল্পিত পারু
কবি ও লেখক
0 Comments