শওকত হোসাইন ।।
একজন বিচারক/ ম্যাজিস্ট্রেট হিশেবে অসংখ্য রেপিস্ট এবং ভিকটিমের জবানবন্দি আমি
গ্রহণ করেছি। তাছাড়া আমার একাডেমিক পড়াশুনাও Criminology এবং Criminal
Psychology নিয়ে। পেশাগত এবং একাডেমিক অভিজ্ঞতা থেকে আমি Rape, Rapist, Victim এবং এই সম্পর্কে গণ-মনসতত্ত্ব বিষয়ে কিছু লেখা
প্রয়োজন মনে করেছি বলেই এই দীর্ঘ লেখা।
কুর্মিটোলা রেইপ মামলার রেপিস্ট ধরা পড়েছে। তার নাম মজনু, সে একজন ভবঘুরে, মাদকাসক্ত, অল্প-
বুদ্ধিসম্পন্ন ( low IQ,
Idiotic), রেললাইনের পাশের খুপরিতে থাকা,
শীর্ণকায় যুবক।
এই আসামী ধরা পড়ার আগে থেকেই বিভিন্ন সুত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে ভিকটিম
বলেছিল অপরাধীটার বয়েস ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে,
অপরাধীটার
গায়ের রং শ্যামলা, অপরাধীটার উচ্চতা
৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, চুল ছোট করে কাটা, অপরাধীটার পরনে ময়লা প্যান্ট এবং পুরনো
জ্যাকেট ছিল, ভিকটিম আরো বলেছে
অপরাধীটার সামনের দুইটা দাত নাই। এই সবই ধরা পরা অপরাধীটার সাথে হুবহু মিলে যায়।
ভিকটিম আরো বলেছিলেন যে অপরাধীটা তার মোবাইল এবং ২০০০ টাকা নিয়ে গেছে। তার পোশাকের
বিবরণ এবং মোবাইল ও ২০০০ টাকা নিয়ে যাওয়া ইংগিত করে যে সে ছ্যাচ্ছর স্বভাবের, দরিদ্র এবং ছিনতাইকারীও বটে। সে যেরকম impulsive বা প্রবৃত্তি - তাড়িত এবং
যেরকম এলোমেলোভাবে ক্রাইম সিনটি ( Crime
scene) রেখে গেছে, এবং যেরকম চরম
ঝুঁকি নিয়ে কাজটা করেছে তাতেও অনুমান করা যায় যে সে অশিক্ষিত, লো আইকিউ সম্পন্ন এবং অগোছালো প্রকৃতির কোন
অপরাধী হবে। এইসবও ধরা পড়া মজনুর সাথে মিলে যায়। তাছাড়া অপরাধীটার কাছ থেকে
ভিকটিমের মোবাইল ও চার্জার ও উদ্ধার হয়েছে।
ভিকটিম বলেছিল অপরাধীটি খুব দাম্ভিক ছিল। দাম্ভিক মানে সে খুব পাওয়ার /
কনট্রোল / ডমিনেশান শো করেছিল। সব রেপিস্টরাই এইটা করে। বলতে গেলে সব অপরাধীরাই
এটা করে, এমনকি একজন ছিঁচকে
ছিনতাইকারীও যখন ছিনতাই করে তখন সেও খুব পাওয়ার এবং ডমিনেশন প্রদর্শণ করে। এই
পাওয়ারফুল ফিল করা হচ্ছে অপরাধীর আনন্দের একটা উৎস । ভিকটিম বলেছিল অপরাধীটি অনেক
শক্তিশালী ছিল, ভিকটিম এরকম বলেছে
কারণ অপরাধীটি শক্তি প্রয়োগ করেছিল। ক্লান্ত,
নার্ভাস
এবং আক্রান্ত যেকোন ভিকটিমের কাছেই মনে হয় যে আক্রমনকারী ছিল অনেক শক্তিশালী- এটাও
স্বাভাবিক। এমনকি ভিকটিম নিজেও দৃঢ় নিশ্চয়তার সাথে অপরাধীকে দেখেই চিনেছে এবং
সনাক্ত করেছে।
তো সবকিছু মিলে যাওয়ার পরেও এবং ভিকটিম নিজে আইডেন্টিফাই করার পরেও ফেসবুকবাসী
কেনো তার ছবি দেখে এতো অবাক / আশ্চর্য?
কেনো
এতো অবিশ্বাস? এটাতো কোন
রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ নয় যে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার জন্য
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ষড়যন্ত্র হবে! তাহলে কেনো এতো অবিশ্বাস?
অপরাধীর ছবি প্রকাশ হবার পর আজ সারাদিন প্রকাশিত সংবাদের নীচে ফেসবুক গোয়েন্দাদের কমেন্ট পরে যা বুঝতে পারলাম তা হল মোটামুটি ২ টি কারনে ফেবুবাসী বিশ্বাসই করতে পারছেনা যে এই সেই আসল অপরাধী। কারন দুইটি হল ১) ধরা পরা মজনু - ফেসবুকবাসী যেমনটি আশা করেছিলেন সেরকম বলিস্ট, ম্যাসকুলিন, ম্যানলি বা দেখতে দুর্ধর্ষ নয় ২) এরকম একজন শীর্নকায় ব্যাক্তি কি করে ভিকটিমকে একা একা ফুটপাথ থেকে টেনে হিচড়ে / পাজাকোলা করে ঝোপে নিয়ে গেলো এবং ভিকটিম কেনো তাকে বাধা দিতে পারলোনা সেইটাও ফেসবুকবাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছেনা।
অপরাধীর ছবি প্রকাশ হবার পর আজ সারাদিন প্রকাশিত সংবাদের নীচে ফেসবুক গোয়েন্দাদের কমেন্ট পরে যা বুঝতে পারলাম তা হল মোটামুটি ২ টি কারনে ফেবুবাসী বিশ্বাসই করতে পারছেনা যে এই সেই আসল অপরাধী। কারন দুইটি হল ১) ধরা পরা মজনু - ফেসবুকবাসী যেমনটি আশা করেছিলেন সেরকম বলিস্ট, ম্যাসকুলিন, ম্যানলি বা দেখতে দুর্ধর্ষ নয় ২) এরকম একজন শীর্নকায় ব্যাক্তি কি করে ভিকটিমকে একা একা ফুটপাথ থেকে টেনে হিচড়ে / পাজাকোলা করে ঝোপে নিয়ে গেলো এবং ভিকটিম কেনো তাকে বাধা দিতে পারলোনা সেইটাও ফেসবুকবাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছেনা।
ভাইয়েরা আমার! প্রথমেই বলে রাখি,
সিনেমায়
যেরকম দেখেন যে নায়িকাকে রেপিস্ট আক্রমণ করলে নায়িকা তারস্বরে চিৎকার শুরু করে
" বাঁচাও বাঁচাও, ছেড়ে দে শয়তান!
" বাস্তবে এমন ঘটেনা। বাস্তবে কাউকে sudden
/ আচমকা
আক্রমণ করা হলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্থানু বা স্থবির হয়ে যায়, তার স্নায়ুতন্ত্র কাজ করেনা, মাথা কাজ করেনা, কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারেনা। ভিকটিম প্রায় 'বিবশ'/ 'অবশ' হয়ে যায়। মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় এটাকে বলে
Tonic immobility বা Local paralysis। যারা ছিনতাইকারীর কবলে
পড়েছেন তারা হয়তো কেউ কেউ এই অনুভূতির সাথে পরিচিত আছেন। আধুনিক নিউরো
সায়েন্টিস্টরা গবেষণা করে দেখেছেন যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিম প্রতিরোধ করাতো
দূরের কথা - এমনকি চিৎকারও করতে পারেন না। ধরা পরা মজনু যতই লো আই-কিউ সম্পন্ন লোক
হোকনা কেনো, সে তার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে
ভিকটিমদের এই 'অবশ'/ 'বিবশ'
প্রতিক্রিয়া ( Tonic immobility) সম্পর্কে ভালোমতই
অবগত ছিল, এইজন্যই সে নির্ধিদ্বায়
ফুটপাথে আক্রমণ করেছিল। কুর্মিটোলা ভিকটিম'কে
অপরাধীটি পেছন থেকে আক্রমণ করার সাথে সাথেই ভিকটিম অবশ হয়ে যায়, সে সম্ভবত ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারিয়ে
ফেলেছিল।
এবারে আসি অপরাধীটি দেখতে এরকম চোরের মতন কেনো বা শৌর্যেবীর্যে বলিয়ান, মহা- ম্যাসকুলিন, বলশালী ও সেইরকম শক্তপোক্ত 'আসল পুরুষের'
মত
দেখতে নয় বলে যারা সন্দেহ করছেন তাদের ব্যাপারে। রেপিস্টদের নিয়ে FBI দীর্ঘদিন গবেষণা করে রেপিস্টদের একটা টাইপোলজি
/ প্রোফাইলিং ( প্রকারভেধ) করেছে। রেপিস্টদের testosterone বা male
hormone বেশী বা রেপিস্টরা অতিমাত্রায় সেক্সি এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরং উল্টোটারই প্রমাণ পাওয়া গেছে বেশী।
বেশীরভাগ রেপিস্টরাই আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে,
অনেকেই
ধ্বজভঙ্গ বা erectile dysfunction এ ভোগে, বেশীরভাগ রেপিস্টরাই নিজের যৌন জীবন নিয়ে
হতাশ। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলা দরকার। রেপিস্ট আছে ৪ রকমের যথা ১) Sadistic ২) Anger Retaliatory ৩) Power Assertive ৪) Power Reassurance।
Sadistic রেপিস্টরা যৌন
আনন্দ লাভ করার জন্য রেইপ করেনা। সে রেইপ করে ভিকটিমকে টর্চার করার জন্য। সে মুলত
ভিকটিমের সাফারিং / যন্ত্রনা / হিউমিলিয়েশান উপভোগ করে। এই ধরনের রেপিস্টরা
অধিকাংশক্ষেত্রেই তাদের ভিকটিমকে ধর্ষনের পরে হত্যা করে ফেলে বা চরম যন্ত্রণা যেমন
সিগারেটের ছ্যাকা দেওয়া বা হাত পা,
স্তন, যোনীপথ কেটে ফেলা এইসব করে আনন্দ লাভ করে। তবে
এরকম Sadistic রেপিস্ট এর সংখ্যা
পৃথিবীর মোট রেপিস্টদের মাত্র ৪ বা ৫ শতাংশ। হরর মুভিতে বা রিভেঞ্জ মুভিতে এই
ধরনের রেপিস্টদের বেশী বেশী দেখানো হয় বলে সাধারণভাবে মানুষ মনে করে রেপিস্ট
মাত্রই স্যাডিস্টিক রেপিস্ট।
দ্বিতীয় টাইপটি হচ্ছে Anger
Retaliatory রেপিস্ট। এরাও যৌণ আনন্দের আশায় রেইপ করেনা। এই টাইপের রেপিস্টদের বেশীরভাগেরই
নিজেদেরই শৈশবে নির্যাতিত হবার ইতিহাস আছে। এরা বেশীরভাগই ছোটবেলায় মায়ের হাতে বা
দাদীর হাতে বা চাচী বা বড় বোনের হাতে প্রচন্ড মারধোরের বা এবিউজের স্বীকার
হয়েছিল ( childhood abuse by
mother or mother figure women)। সেই থেকে এরা নিজের অবচেতন মনে পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি
তীব্র ঘৃণা এবং বিদ্বেষ লালন করে । এদের অনেকেই হয়তো নিজেই জানেনা যে সে নিজের অবচেতনে
পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি এরকম hostility
( ঘৃনা
/ বিদ্বেষ) বহন করে বেড়াচ্ছে। এরা রেইপ করে নিজের এই রাগ/ বিদ্বেষ চরিতার্থ করার
জন্য। প্রতিশোধ নেবার মতন একটা বিকৃত আনন্দ এরা পায় ধর্ষণ করে। এই প্রকারের
রেপিস্টরাও তাদের ভিকটিমের সাফারিং / অপমান/ যন্ত্রণা উপভোগ করে প্রতিশোধের আনন্দ
পায়। এদের সংখ্যাও ১০ থেকে ১৫ পারসেন্ট।
তৃতীয় প্রকারটি হচ্ছে Power
Assertive রেপিস্ট। এরা মুলত রেইপ করে নিজেকে ক্ষমতাবান ফিল করার জন্য। নিজেকে ক্ষমতাবান
ফিল করার বিকৃততম ও সহজতম উপায় হচ্ছে অন্যকে অপমান করা। এদের কাছে এই ক্ষমতাবান ফিল
করার অংশ হচ্ছে রেইপ করা। They
rape because thats how they feel that they are powerful, that they can rape or
do whatever they want to । এদের চলাফেরায় দেখবেন একটা অতিরিক্ত গা-জোয়ারি ভাব আছে, অতিরিক্ত ব্যাটাগিরি দেখানোর প্রবণতা আছে, নিজেকে ম্যাচো গাই ( macho guy) বা টাফ গাই দেখানোর একটা
প্রবনতা আছে এদের মধ্যে। প্রকৃতপক্ষে এরাও ভিতরে ভিতরে ইনসিকিউরড বলেই এরকম ওভার
পাওয়ারফুল ভাব নেবার চেষ্টায় থাকে। এই প্রজাতির পুরুষেরা বন্ধুর সাথে হ্যান্ডশেইক
করার সময়ও প্রয়োজনের চেয়ে জোরে হাতে চাপ দিবে,৷ " কি দোস্ত কেমন আছিস " বলে বন্ধুর পিঠে চাপড় দেবার সময়ও এরা
অন্যদের চেয়ে জোরে চাপড় দিবে। এরা সাধারনত স্কুলে বা কলেজে বা ভার্সিটিতে বুলি / bully টাইপের হয়। তবে এদের সংখ্যাও ১০ পারসেন্ট এর
বেশী না।
সবশেষে, বেশীরভাগ - প্রায় ৭৫%
রেপিস্টরাই হচ্ছে Power
Reassurance টাইপের। এরা মুলত নিজের ম্যাসকুলিনিটি বা পৌরুষ নিয়ে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা socially
awakward হয়, চার্মিং পারসোনালিটির
অভাবে বা অন্য যেকোন কারনেই হোক এরা বন্ধুমহলেও তেমন একটা জনপ্রিয় নয়। হয়তো
ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ও সহপাঠী মেয়েরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। সবমিলিয়ে সে
মুলত একজন ইনসিকিউরড এবং আত্মবিশ্বাসহীন ব্যক্তি। তার ধারনা সে নারীদের কাছে
যথেস্ট আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক নয়,
মেয়েরা
কেনো তাকে পছন্দ করেনা এই নিয়ে সে পৃথিবীর সকল নারীর ওপর কিছুটা ক্ষিপ্ত এবং নিজের
প্রতি কিছুটা হতাশও বটে, তার সন্দেহ হয় যে
" I may not be man enough to
conquer women that I deserve ", এই রুঢ় বাস্তবতাটা সে আবার মেনেও নিতে পারেনা।
এই বিপরীতমুখী আবেগের অত্যাচারে সে নিজের সাথেই নিজে দগ্ধ হতে থাকে। মোটাদাগে
দুইটা ভ্রান্ত ধারনায় ( illusion) সে ভুগতে থাকে, যথা ১) আমি আসলে যোগ্য এবং ম্যানলি তবে মাঝে
মাঝে মনে হয় আমি হয়তো যথেস্ট ম্যানলি বা আকর্ষণীয় নই , তবে - সুযোগ পেলে একদিন দেখিয়ে দিতাম. ২)
মেয়েরা মুখে যতই না বলুক আসলে একবার মেয়েদেরকে কাবু করতে পারলে নারীরা আসলে রেইপ
উপভোগই করবে ( ইভটিজিং করলে মনে মনে মেয়েরা খুশী হয় এরকম একটা বাংলা ফেসবুক পেইজে
প্রায় ২ লক্ষ লাইক / ফলোয়ার ছিল- পেইজটা এখন আর নাই) । যাইহোক, নিজের পৌরুষ নিয়ে অনিশ্চয়তা / ইনসিকিউরিটি
থেকে সে কোন নারী'কে রেইপ করে নিজের
পৌরুষ জাহির করতে চায়। কার কাছে সে এই পৌরুষ জাহির করে? নিজের কাছেই। সে reassure হতে চায় নিজের কাছে।
এইজন্য এই টাইপের রেপিস্টদের নাম power
reassurance. প্রায় ব্যাতিক্রমহীনভাবেই এই ধরনের রেপিস্টরা আক্রমন করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল
ভিকটিম যথা বাসার কাজের মেয়ে, গার্মেন্টস কর্মী, দুর্বল পথচারী, প্রতিবন্ধী নারী,
নিজের
বাসার ভাড়াটিয়া, প্রবাসীর স্ত্রী, নিজের ছাত্রী, ভিখিরি বা ভাসমান নারী এবং কমবয়েশী শিশু বা ভালনারেবল
ভিকটিমদের। এই প্রজাতির রেপিস্টদের সংখ্যা মোট রেপিস্টদের প্রায় ৭৫%।
কুর্মিটোলা রেইপ কেসের ধৃত মজনু হচ্ছে এই প্রজাতির ( Power Reassurance) রেপিস্ট। নিজের পৌরুষ
সম্পর্কে অনিশ্চিত, ইনসিকিউরড এবং
আত্মবিশ্বাসহীন রেপিস্টদের সংখ্যা যদিও মোট রেপিস্টদের ৭৫% তবুও কোন এক অজানা
কারনে আমাদের দেশের অনেকের ধারনা রেপিস্ট মানেই বাহুবলি টাইপের দুর্ধর্ষ, বলশালী- সেইরকম ম্যাসকুলিন কোন পুরুষ। কি
অদ্ভুত বৈপরিত্য। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ
বাংলাদেশী ফেসবুক ইউজারের চিন্তাভাবনা Power
Reassurance রেপিস্ট এর চিন্তাধারার সাথে হুবহু মিলে যায় - এটা যে কতবড় দুঃসংবাদ তা কি
আমরা অনুধাবন করতে পারছি?
এখন মিলিওন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে রেপিস্ট কেন ভাবা শুরু করলো যে কাওকে রেইপ
করতে পারলে নিজেকে ' আসল পুরুষ ' / real man বা পাওয়ারফুল পুরুষ হিশেবে
জাহির করা যাবে? কেনইবা সে তার
ম্যাসকুলিনিটি reassure করার জন্য রেইপ
করা আবশ্যক মর্মে ভেবে নিলো? এই প্রশ্নের উত্তর
পাওয়া যাবে আজ সারাদিনের সংবাদের নীচে আমাদের বংগীয় ফেসবুকবাসীর কমেন্ট পরলে।
হাজারে হাজারে, লাখে লাখে কমেন্ট
দেখলাম যারা কমেন্টে তাদের বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন রেপিস্ট মজনুর ছবি দেখে।
এই কমেন্টকারীদের মাথার ভিতর রেপিস্ট এর ছবি আকা আছে বলশালী, বলিস্ট,
তেজী, সেইরকম ম্যাসকুলিন কোন পুরুষ হিশেবে। এই
কমেন্টকারীরা বেশীরভাগই নিজেরাই নিজেদের পৌরুষ নিয়ে ইনসিকিওরিটিতে ভুগছেন, এবং অনুকুল পরিবেশ এবং সুযোগ পেলে নিজের
গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রী বা পাশের বাসার মেয়েটির ওপর চড়াও হয়ে নিজের ম্যাসকুলিনিটি
রিএশিওর করে নিবেন। আফটার অল, কে না চায় নিজেকে
বলশালী, ডিজার্ভিং, তেজী এবং ম্যানলি হিসেবে নিজের কাছে জাহির
করতে।
প্রিয় ফেসবুকবাসীগন, ধরা পড়া মজনু যে, আসলেই অপরাধী তা ভিকটিম নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
বেশীরভাগ ( অন্তত power
reassurance টাইপের ৭৫ ভাগ) রেপিস্টরাই এরকম দুর্বল চরিত্রের, আত্মবিশ্বাসহীন এবং লো আইকিউ সম্পন্ন হয়ে
থাকে। মজনু যে আসলেই অপরাধী তা নিয়ে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই তবে মজনুকে দেখে যারা
হতাশ হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে, যথাসময়ে এবং যথাযত সুযোগ পেলে নিজেকে reassure করার জন্য আপনারাও তেজী ও
বলশালী এবং ম্যানলি হয়ে উঠার ট্রাই করবেন বলে আমার সন্দেহ হয়।
শওকত হোসাইন
ফেসবুক হতে
0 Comments