একুশের কালজয়ী গানটি যেভাবে তৈরী হলো



শাওন মাহমুদ ।।


আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের গানটি পরিবেশনের সময়কাল নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন ৫৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে আলতাফ মাহমুদ নুতন সুরারোপে মনোনিবেশ করেন এবং ১৯৫৪ সালেই আলতাফ মাহমুদ তাঁর দেয়া নুতন সুরে নিজেই গানটি পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে
ইতিহাসকে সামনে রেখে সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস এ ভাবে লিখেন –‘আব্দুল লতিফের সুরটি মন্দ ছিল না। কিন্তু কিসের যেন অভাব ছিল তাতে। ...... আলতাফ মাহমুদের নুতন সুরে জনতার কর্ণে যেন মধু ঢেলে দিল। কি ভীষণ মাদকতা , কি ভয়ঙ্কর আকর্ষণ সে গানের। গানের এক একটি কলি তার কণ্ঠে ধবনিত হলেই শ্রোতা যে অবস্থায় এবং যেখানেই থাকুক নিজের মন নিজের কাছে ধরে রাখতে পারে না। এই গানের সুর নিয়ে আব্দুল লতিফ নিজে কোন দিন বলেননি এটি আমার সুর। বরং আলতাফ মাহমুদের সুরের প্রশংসা করে নিজের আরোপিত সুরটি প্রত্যাহার করেন। যা কালের গর্ভে বিলীন- বহু অনুসন্ধান করেও আব্দুল লতিফের সুরের সন্ধান করা যায়নি।'

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী কবিতায় আলতাফ মাহমুদের কালাতীত ধ্রুপদী সুরারোপের পর আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত কবিতাটি বাংলাদেশে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে আলতাফ মাহমুদ নিজেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পুরো কবিতাটি গেয়ে পরিবেশন করেছেন। এর পর দু তিনবার নিজের সুরকে নিজেই সামান্য পরিবর্তন করেন।

যতদূর জানা যায় নিজস্ব তৃতীয় সুর করার পর বাংলাদেশের গণসংগীতের দুই দিকপাল শেখ লুতফর রহমান এবং আব্দুল লতিফের কাছে গিয়েছিলেন মতামত জানবার জন্য। অনুমতি পাওয়ার জন্য। তাঁরা দুজনে আলতাফ মাহমুদের সুরের উচ্ছসিত প্রশংসা করে মতামত দিয়েছিলেন। আব্দুল লতিফ বলেছিলেন এখন থেকে এই সুরেই গানটি গাওয়া হবে।

বর্তমানে যে সুরে এই গানটি পরিবেশন করা হয় তা আলতাফ মাহমুদের নিজস্ব তৃতীয় মডিফিকেশনের ফল। শুধু যে গানের সুর পরিবর্তন করেছেন তা নয়, কবিতাটির শেষের ছয়টি চরণও বাদ দিয়েছিলেন তিনি। তবে তা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অনুমতি নিয়ে বাদ দিয়েছিলেন




শাওন মাহমুদ
আলতাফ মাহমুদের কন্যার ফেসবুক থেক

Post a Comment

0 Comments