করোনা নিয়ে আমি কি আতংকিত।
না। কেন আতঙ্কিত নই, তার তথ্যসহ ব্যাখ্যা
আজ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০,৯২৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
ওয়ার্ল্ডমেট্রো ডট ইনফ'র তথ্যমতে সদ্যোজন্মপ্রাপ্ত শিশু থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত যে কোন ব্যাক্তির করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ২ শতাংশেরও কম।
৪৯ বছর বয়স্ক পর্যন্ত ব্যাক্তির করোনায় মৃত্যুর হার ১.৩% আর দশ বছর পর্যন্ত শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ০%
১০৪ টি দেশে করোনা ছড়ালেও মাত্র ২০ টি দেশে করোনায় মানুষ মারা গেছে অর্থাৎ বাকি ৮৪টি দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
করোনায় যারা মারা গিয়েছে তাদের অধিকাংশের বয়স ৬০ এর অধিক এবং তাদের আগে থেকেই শারীরিক অসুস্থতা ছিল (ফুসফুস সমস্যা বা ডায়াবেটিকস)
আমি কি চিন্তিত?
একশো ভাগ চিন্তিত। আমার প্রধান চিন্তা পরিবারের বয়স্ক ব্যাক্তিদের নিয়ে। করোনায় সবচাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত বয়স্করা।
আমার দ্বিতীয় চিন্তার কারন আমাদের মানুষের খাসলত। আজ সুপারশপে দেখলাম মানুষ পাগলের মতো সাবান হান্ডওয়াশ, টিস্যু কিনছে, স্টোর প্রায় খালি হয়ে যাচ্ছে। অথচ চারজনের পরিবারে দুইটার বেশী বড় সাবান লাগার কথা নয়, বিশেষ প্রয়োজনে এক্সট্রা দুইটা কিনে রাখতে পারে কিন্তু তাই বলে একজনই যদি দশ বারোটা কিনে স্টক করে রাখে তবে কাল থেকেই সাবানের সংকট দেখা দিবে আর এই সুযোগে সাবানের দাম বেড়ে কয়েকগুন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বাজার থেকে মাস্ক উদাও হয়ে গেছে
করোনার উৎপত্তিস্থল ও সবচাইতে আক্রান্ত চায়না গত কয়েকদিনে যেভাবে করোনা মোকাবেলা করছে তার সিকিভাগ সামর্থ্য আমাদের নেই।
চায়না সরকার সর্বশক্তি লাগিয়ে করোনা প্রতিরোধে চেষ্টা করছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য মাত্র দশদিনে আলাদা হসপিটাল তৈরি করেছে, পুরো একটা শহর কোয়ান্টেরাইন করেছে, হাজার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসাকর্মী দিনরাত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে, ভলান্টিয়ার দিয়ে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে, এলাকা পরিষ্কার রাখছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের পরিচিতজনদের ডাটাবেইজ তৈরি করে খুঁজে খুঁজে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
গত সপ্তাহেও চায়নায় করোনায় নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ২০০০ যা গতকাল মাত্র ৯৯ জনে নেমে এসেছে।
আমাদের এইসবের সামর্থ্য নেই, প্রতিরোধ দূরের কথা, করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে কিভাবে ব্যবসা করা যায় সেই ধান্দা শুরু হবে সবার আগে।
ভলান্টিয়ার কাজ করতে গিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের মারামারি বাঁধবে। এক দল আরেক দলকে দোষারোপ করবে। মন্ত্রীরা কে কার চেয়ে বেশী হাস্যকর কথা বলতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় নামবে।
করোনা চিকিৎসায় বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট হয়ে যাবে।
অনলাইন নিউজপর্টাল হিট শিরোনাম বানাতে একের পর এক গুজব রটাবে। চারপাশে তৈরি হবে প্যানিক। রুপকথা।
'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' এর কালচার যেহেতু আমাদের সমাজে গড়ে উঠেনি। স্কুল কলেজ অফিস বন্ধ হয়ে গেলে দেশ চরম মাত্রায় এক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কাঁচামালের অভাব ও পরিবহন সংকটে ছোট খাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে (যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে)
নিম্নআয় বা মধ্যবিত্তদের এই উচ্চমূল্যের বাজারে সারভাইব করাটাই কঠিন হয়ে উঠবে।
চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার মতো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি কি আমাদের আছে? একদমই নেই।
আসন্ন ক্রাইসিসগুলো সমাধানে আগামী কয়েকদিনেই প্রমান হয়ে যাবে জাতি হিসেবে সত্যি আমরা কতোটা ঐক্যবোধ। সম্মিলিত শক্তির বিকল্প এখন নেই। রাজনৈতিক নেতারা সেই কথা কি বুঝবে?
বিঃদ্রঃ সাবান খাওয়া যায় না। তাই স্টক করবেন না
করোনা কোন ব্যবসা নয়
আতংক নয়, সচেতন হন
#বাঁচুন_আর_বাঁচতে_দিন
রাফিউজ্জামান সিফাত
ফেসবুক হতে
0 Comments