নীহাররঞ্জন রায়।।
আগেই বলিয়াছি, প্রাচীন বাঙালীর খাদ্য
তালিকায় ডালের উল্লেখ কোথাও দেখিতেছিনা।
ইহাতে আর্শ্চয্য হইবার কিছু নাই। বাঙলা আসাম ও উড়িষ্যায় যত ডাল আজও ব্যবহৃত হয় এই
ব্যবহার ক্রমশ বাড়িতেছে সমাজের সকল স্তরেই – তাহার খুব স্বল্পাংশই এই
তিন প্রদেশে জন্মায় । পূর্বেও তাহাই ছিল; বোধ হয় উৎপাদন আরো কম ছিল। পূর্ব দক্ষিন
এশিয়ায়, প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ ও দ্বীপগুলোতে আজও ডালের ব্যবহার অত্যন্ত কম, নাই
বললেই চলে। সেই জন্য ডালের চাষও নাই ।
বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় যেমন বরিশালে ও ফরিদপুরে, উচ্চকোটি লোকস্তরে বহুক্ষেত্রে
উদ্ভিজ ও আমিষ ব্যঞ্জনাদি খাওয়ার পর সর্বশেষে ডাল খাওয়ার রীতি প্রচলিত। আর নিম্নকোটি
স্তরে বাঙলার সর্বত্রই আজও অনেকে ডা্রর ব্যবহারই করেন না ; প্রাচীনকালে বোধ হয়
একিবারে করতেন না। আর সুলভ মৎস্যভোজির
পক্ষে তাহার প্রযোজনও ছিল কম। বস্তুত, ডালের চাষ ও ডাল খাওয়ার রীতিটা বোধ হয় আর্য
ভারতের দান, এবং তাহা মধ্যযুগে।
এ তথ্য অনস্বীকার্য যে, সুপ্রাচীন কাল হইতে মৎস্যভোজি বাঙালীর আহার্য
অবাঙালীদের রুচি ও রসনায় খুব শ্রদ্ধেয় ও প্রীতিকর ছিলনা; আজও নয়। তীর্থংকর মহাবীর
যখন ধর্মপ্রচারোদ্দেশে শিষ্যদল লইয়া পথহীন রাঢ় ও বজ্রভূমিতে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলেন
তখন তাহাদের অখাদ্য কুখাদ্য খাইয়া দিন কাটাইতে হইয়াছিল । সন্দেহ নাই যে, সেই
আদিবাসি কৌম সমাজের মৎস্য ও শিকার মাংস ভক্ষন, সমসাময়িক সাধারণ বাঙালীর উদ্ভিজ্জ
ব্যঞ্জনাদি এবং তাহাদের আদিম রন্ধন প্রণালী ভিন প্রদেশী জৈণ আচর্য্যেদের নিরামিষ
রুচি ও রসনায় অশ্রদ্ধার উদ্রেগ করিয়াছিল। সেই অশ্রদ্ধা আজও বিদ্যমান ।
নীহাররঞ্জন রায়
বই : বাঙালীর ইতিহাস (আদি পর্ব )
প্রকাশকাল : ১৯৪৯
0 Comments